Wednesday, November 12, 2025
Homeখবরকবি বিদ্যুৎ ভৌমিক রচিত "আকাশলীনা তোর জন্য" কবিতার পর্যালোচনা

কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক রচিত “আকাশলীনা তোর জন্য” কবিতার পর্যালোচনা

আলোচনায় : শংকর হালদার শৈলবালা
_____________________________________

আকাশলীনা তোর জন্য
কলমে : বিদ্যুৎ ভৌমিক

যতই আমায় বৃষ্টি বাদল স্বপ্নে এসে দেখা ; তোর মতো মিথ্যা বলতে পারবো না … তিন সত্যি ! দিব্বি কাটছি !

এই ভাবে ঠিক মনের মধ্যে প্রতি মূহুর্ত আঁকতে আঁকতে গভীরে তোর লাবণ্যরেখা ; এরপরেতে মেঘের দেহে হঠাৎ করে আচম্বিতে আগুন জ্বলে ওঠে , নতুন কেনা আয়না দিয়ে অঝর ধারায় শ্রাবণ নামে ছন্দ না মেনে ! ঠিক এভাবেই সে–ই আগের মতই দলবেঁধে বৃষ্টিরা সব একই সাথে নেমে আসে ভুবনডাঙায় ভরদুপুরে ! কি, বিশ্বাস হ’চ্ছে না আকাশলীনা ?

শেষ সন্ধ্যায় চাঁদের আলো কী ভাসমান অসাবধানী ; তবুও যেন ভালো লাগা , মন্দ লাগা যাইনি ভোলা ! তোকে ছুঁয়ে বলছি…

দুই হাতেতে হঠাৎ পাওয়া বৃষ্টি আদর ; হৃদয়পাড়ে যত্ন করে রাখাই ছিল সাতটা বছর ! এটা আমার সর্বকালীন সত্যি কথা ; তবুও আমি বুক বাজিয়ে বলতে পারি ,— তোর মত একটাও মিথ্যা বলতে পারবো না !

অন্ধকারকে বনের পথে খুঁজতে গিয়ে আকাশ আমায় হাত বাড়িয়ে দু’চার মুঠো হীরের মতন জ্বল জ্বলে কত তারা দিল , বিনে পয়সায় !

এই যে আমার মনের মধ্যে সমুদ্র এসে সতত ঢেউ তোলে ; তবুও যেন তুমি শূন্য তুমি শূন্য এই বিছানা… অবিবেচক প্রতিটা রাতে !

যদিও আমার স্বপ্ন থেকে নতুন একটা আকাশ ডাকে ; রূপকথারা সেই হরিণীর পেছন ছোটে মৃগনাভীর ব্যাকুলতায় !

হঠাৎ করেই অন্য একটা সময় এসে হাজির হলো ! এই তো আমার ঠোটের মধ্যে তোর আঁকা সেই প্রথম চুমু ; অটুট তবু স্মৃতিনির্জন… তবু কেন এই এতক্ষণ তোরই জন্য অতল জুড়ে বৃষ্টি ভেজা সকাল – দুপুর – সারারাত্রি !
অন্য একটা দিনের মধ্যে সে-ই তোকে তাই গুছিয়ে রাখি ; স্বভাবদোষে !

কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক রচিত “আকাশলীনা তোর জন্য” কবিতার বিস্তারিত পর্যালোচনা

বাতাসপরীর ডানার ঝাপট স্বপ্নে স্বপ্নে স্মৃতি নির্ভর ; অথচ কেন ভেতর থেকে ভুলতে চেয়েও যায় না ভোলা তোর দেওয়া সেই শর্তগুলো ! বহুদিনের কষ্টরা সব মিথ্যা মিথ্যা দগ্ধে মারে অতলান্ত… শেষ পর্যন্ত এমন থেকে এতকালের বৃষ্টিগুলো বের করে দেই ; অথচ আমি অনেক চেষ্টায় না পারি যে তোকে ভুলতে, সত্যি বলছি আকাশলীনা ! তিন সত্যি , দিব্বি কাটলাম …

◆ “আকাশলীনা তোর জন্য” কবিতাটি একটি চিরায়ত প্রেমের কবিতা নয়, বরং এটি এক গভীর বেদনা, স্মৃতি এবং অপ্রাপ্তির এক মুক্ত ও সাবলীল স্বীকারোক্তি। এটি আধুনিক গদ্যছন্দে লেখা, যা কবির মনের ভেতরের চিন্তার অসংলগ্ন প্রবাহকে তুলে ধরে।

◆ প্রথম স্তবকে কবি সরাসরি “আকাশলীনা”-কে উদ্দেশ্য করে কথা বলেছেন, যা এক ব্যক্তিগত ও অন্তরঙ্গ সুর তৈরি করে। কবি নিজেকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অস্বীকার করলেও, বারবার “তিন সত্যি! দিব্বি কাটছি!” বলে তার কথার সত্যতাকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। এটি তার আত্ম-সংশয় এবং গভীর মানসিক দ্বন্দ্বের পরিচায়ক। এরপর বৃষ্টির চিত্রকল্প ব্যবহার করে তিনি অতীত স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। “মেঘের দেহে হঠাৎ করে আচম্বিতে আগুন জ্বলে ওঠে” লাইনটি অতীতে কোনো আকস্মিক ও তীব্র আবেগপূর্ণ ঘটনার ইঙ্গিত দেয়। “নতুন কেনা আয়না দিয়ে অঝর ধারায় শ্রাবণ নামে ছন্দ না মেনে” – এই লাইনটি যেন স্মৃতিগুলোর এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং তা কোনো নিয়ম না মেনে কবির মনে বেদনা হয়ে ঝরে পড়ার ইঙ্গিত।

◆ দ্বিতীয় স্তবকে কবি স্মৃতিচারণ করেছেন। “শেষ সন্ধ্যায় চাঁদের আলো কী ভাসমান অসাবধানী” – এই লাইনটি সেই ফেলে আসা দিনগুলোর এক উদাসীন, মধুর বিষণ্ণতার ছবি আঁকে। “দুই হাতেতে হঠাৎ পাওয়া বৃষ্টি আদর; হৃদয়পাড়ে যত্ন করে রাখাই ছিল সাতটা বছর!” – এই পংক্তিগুলো একটি বিশেষ স্মৃতিকে তুলে ধরে, যা সাত বছর ধরে সযত্নে লালিত হয়েছে। এখানে “বৃষ্টি আদর” এক কোমল ও ক্ষণস্থায়ী প্রাপ্তি, যা কবির কাছে অমূল্য।

◆ তৃতীয় স্তবকে কবিতাটি আরও প্রতীকী ও বিমূর্ত হয়ে ওঠে। “অন্ধকারকে বনের পথে খুঁজতে গিয়ে আকাশ আমায় হাত বাড়িয়ে দু’চার মুঠো হীরের মতন জ্বল জ্বলে কত তারা দিল, বিনে পয়সায়!” – এই চিত্রকল্পটি যেন কবির হতাশা ও দুঃখের মধ্যে অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। “এই যে আমার মনের মধ্যে সমুদ্র এসে সতত ঢেউ তোলে; তবুও যেন তুমি শূন্য তুমি শূন্য এই বিছানা…” – এই লাইনগুলো কবির মানসিক অস্থিরতা ও একাকীত্বের এক শক্তিশালী বৈপরীত্য তুলে ধরে। কবির মনে সমুদ্রের মতো ঢেউয়ের অস্থিরতা থাকলেও তার বাস্তব জীবন ও বিছানা শূন্য। এরপর “রূপকথারা সেই হরিণীর পেছন ছোটে মৃগনাভীর ব্যাকুলতায়!” – এই পংক্তিটি অপ্রাপ্তি ও নিরন্তর খোঁজের এক গভীর রূপক, যেখানে হরিণ যেমন তার নিজের গন্ধের উৎস খুঁজে ফেরে, তেমনই কবি তার ভালোবাসার মানুষের অনুপস্থিতিতে তার স্মৃতির পেছনে ছুটছেন।

◆ চতুর্থ স্তবকে সময় ও স্মৃতির এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। “এই তো আমার ঠোঁটের মধ্যে তোর আঁকা সেই প্রথম চুমু; অটুট তবু স্মৃতিনির্জন…” – এই পংক্তিতে কবি প্রথম চুমুর স্মৃতিকে এখনও জীবন্ত বলে দাবি করেছেন, যা তার কাছে এক অটুট কিন্তু নির্জন স্মৃতি। এরপর তিনি কেন এখনও সেই মানুষটির জন্য সারারাত্রি বৃষ্টিতে ভেজা সকাল-দুপুর-রাত কাটান, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। শেষে তিনি “স্বভাবদোষে” তাকে অন্য একটা দিনের মধ্যে গুছিয়ে রাখার কথা বলেছেন, যা তার স্মৃতিকে বার বার আঁকড়ে ধরে থাকার এক অভ্যাসকে নির্দেশ করে।

◆ শেষ স্তবকে এসে কবি তার দীর্ঘদিনের কষ্ট ও স্মৃতিগুলোকে নিয়ে কথা বলেছেন। “বাতাসপরীর ডানার ঝাপট স্বপ্নে স্বপ্নে স্মৃতি নির্ভর” – এখানে বাতাসপরী ও স্বপ্ন স্মৃতির বাহক হিসেবে এসেছে। “ভুলতে চেয়েও যায় না ভোলা তোর দেওয়া সেই শর্তগুলো!” – এই লাইনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে; এই সম্পর্কের সমাপ্তি কোনো শর্তের কারণে হয়েছে। শেষে কবি তার দীর্ঘদিনের জমা কষ্ট ও বৃষ্টিগুলো বের করে দিলেও, অনেক চেষ্টা করেও তাকে ভুলতে পারছেন না বলে আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন। কবিতার শুরু ও শেষের পুনরাবৃত্তি এর আক্ষেপ এবং চিরন্তন বেদনার চক্রকে তুলে ধরে।

◆ কবিতার মান নির্ণয় : কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক রচিত “আকাশলীনা তোর জন্য” কবিতাটি “বাঙালি লেখক সংসদ” কর্তৃক আন্তর্জাতিক কবিতা সমীক্ষা-২০২৫ অনুসারে কবিতার মান নির্ণয় করে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫/১০০ মান প্রাপ্তির যোগ্যতা রাখে।

◆ ১. ভাব ও বিষয়বস্তু : কবিতাটির মূলভাব অপ্রাপ্ত ভালোবাসা, স্মৃতি ও তার যন্ত্রণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। কবির হৃদয়ের ক্ষোভ, হতাশা ও অটল ভালোবাসার এক সুনিপুণ প্রকাশ ঘটেছে। (৯/১০)

◆ ২. আবেগ ও অনুভূতির গভীরতা : কবিতাটি আবেগ ও অনুভূতির দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী। এখানে বেদনা, হতাশা, স্মৃতিবিলাস এবং এক গভীর অসহায়ত্বের অনুভূতি স্পষ্ট। কবির যন্ত্রণা পাঠকের মনে সহজেই অনুরণন তোলে। (১০/১০)

◆ ৩. শব্দ ও ভাষার ব্যবহার : কবি দৈনন্দিন ও প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা কবিতার ভাষাকে সহজ ও সাবলীল করেছে। “দিব্বি কাটছি” বা “বিনে পয়সায়” এর মতো বাক্যবন্ধগুলো আধুনিক বাংলা কবিতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। (৯/১০)

◆ ৪. ছন্দ ও তাল : কবিতাটি সম্পূর্ণ গদ্য ছন্দে রচিত, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট অন্ত্যমিল বা ছন্দ নেই। এর গতিবিধি কবির আবেগের প্রবাহকে অনুসরণ করে, যা কবিতার মূল ভাবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। (৭/১০)

◆ ৫. চিত্রকল্প ও রূপক : কবিতাটিতে বহু শক্তিশালী চিত্রকল্প ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন— “বৃষ্টি বাদল স্বপ্নে এসে দেখা”, “হীরের মতন জ্বল জ্বলে কত তারা”, “সমুদ্র এসে সতত ঢেউ তোলে”, “মৃগনাভীর ব্যাকুলতায়”। এই চিত্রকল্পগুলো কবিতার বক্তব্যকে আরও গভীর ও ব্যঞ্জনাময় করে তুলেছে। (১০/১০)

◆ ৬. সৃজনশীলতা ও মৌলিকতা : কবিতাটির সবচেয়ে বড় সৃজনশীলতা এর গঠনশৈলীতে। একটি ব্যক্তিগত ও বিমূর্ত স্মৃতিকে এভাবে গদ্য ছন্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা এবং একই বাক্য ও শব্দবন্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আক্ষেপের গভীরতা বোঝানো খুবই মৌলিক। (৯/১০)

◆ ৭. পুনরাবৃত্তি ও বাহুল্য : “দিব্বি কাটছি”, “তিন সত্যি”, এবং “আকাশলীনা”-এর মতো শব্দের পুনরাবৃত্তি একপ্রকার ইচ্ছাকৃত, যা কবির আক্ষেপ ও মনস্তত্ত্বকে প্রকাশ করে। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই আবেগ বিভিন্ন পংক্তিতে বারবার আসায় তা কিছুটা বাহুল্য সৃষ্টি করেছে। (৮/১০)

◆ ৮. গঠন ও বিন্যাস : কবিতাটি বিভিন্ন স্তবকে বিভক্ত হলেও একটি সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে না। এটি যেন কবির বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনার এক নির্যাস। তবে এই অসংলগ্নতাই এর বিশেষত্ব, যা একাকীত্ব ও স্মৃতির বিশৃঙ্খলতাকে প্রকাশ করে। (৮/১০)

◆ ৯. ধ্বন্যাত্মক শব্দ বা অনোম্যাটোয়িয়া : এই কবিতাটিতে কোনো ধ্বন্যাত্মক শব্দের ব্যবহার নেই। এই ধরনের বিষণ্ণ ও মননশীল কবিতার ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনও হয় না। (৫/১০)

◆ ১০. পাঠকের উপর প্রভাব : কবিতাটির গভীর আবেগ এবং সরাসরি প্রকাশভঙ্গী পাঠকের মনে এক শক্তিশালী ছাপ ফেলে। এটি ভালোবাসা ও অপ্রাপ্তির এক সার্বজনীন অনুভূতিকে সফলভাবে তুলে ধরে, যা যে কোনো পাঠকের কাছেই স্পর্শকাতর। (১০/১০)

◆ কবিতার সামাজিক প্রভাব : এই কবিতাটি সরাসরি কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখা না হলেও, এটি আধুনিক সময়ের তরুণ সমাজের মধ্যে প্রেম, সম্পর্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের এক অন্তর্নিহিত প্রতিফলন। এটি দেখায় যে, বাহ্যিক চাকচিক্য বা সামাজিক প্রদর্শনের চেয়েও মানুষের ভেতরে লুকানো আবেগ ও অপ্রাপ্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কবিতার সরাসরি ও অকপট ভাষা প্রমাণ করে যে, বর্তমানে কবিরা আর ঐতিহ্যগত কাব্যিক ভাষা ব্যবহার না করে সাধারণ মানুষের কথা বলতে চাইছেন। এই কবিতাটি সেইসব অনুভূতিহীন সমাজের প্রতি একটি প্রতিবাদ, যেখানে ভালোবাসা ও যন্ত্রণার গভীরতাকে উপেক্ষা করা হয়।

◆ কবিতার দুর্বলতার দিক ও উন্নতির পরামর্শ : এই কবিতার প্রধান শক্তি হলো এর আবেগ ও মৌলিকতা। তবে কিছু দুর্বলতাও লক্ষণীয়:

◆ দুর্বলতা : কবিতাটির গদ্যময় প্রকাশভঙ্গী অনেক সময় কাব্যিক ব্যঞ্জনা থেকে সরে এসে কেবল সরাসরি বর্ণনায় পরিণত হয়েছে। কিছু পংক্তি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত দীর্ঘ ও জটিল, যা একবার পড়ে এর অর্থ সম্পূর্ণ বোঝা কঠিন করে তোলে।

◆ উন্নতির পরামর্শ (উদাহরণসহ) : দীর্ঘ বাক্যগুলোকে ছোট ও তীক্ষ্ণ বাক্যে বিভক্ত করা যেতে পারে। যেমন, “এই ভাবে ঠিক মনের মধ্যে প্রতি মূহুর্ত আঁকতে আঁকতে গভীরে তোর লাবণ্যরেখা” পংক্তিটির পরিবর্তে লেখা যেত: “মনের গভীরে আঁকি তোর লাবণ্যরেখা।”

◆ দুর্বলতা : কিছু চিত্রকল্প সুন্দর হলেও, তাদের মধ্যেকার সংযোগ মাঝে মাঝে দুর্বল মনে হয়। যেমন, সমুদ্রের ঢেউয়ের অস্থিরতার সঙ্গে স্বপ্নের হরিণের পেছনে ছোটার সম্পর্কটি কিছুটা অস্পষ্ট।

◆ উন্নতির পরামর্শ (উদাহরণসহ) : প্রতিটি স্তবকে একটি নির্দিষ্ট চিত্রকল্পকে প্রাধান্য দিয়ে তাকে আরও বিশদভাবে তুলে ধরা গেলে কবিতাটি আরও সংহত হতে পারত।

অন্যান্য কবিদের সাথে তুলনা

◆ ১. জয় গোস্বামী : জয় গোস্বামীর প্রেমের কবিতাগুলো প্রায়শই বিমূর্ত ও স্মৃতিচারণমূলক, যেমন তাঁর বিখ্যাত “বেতন” কবিতা। এই কবিতায়ও যেমন প্রেমিকার অনুপস্থিতিতে এক অদ্ভুত সুরিয়েল জগতের জন্ম হয়েছে, তেমনই বিদ্যুৎ ভৌমিকের কবিতায় “আকাশলীনা”র অনুপস্থিতিতে একাকীত্বের যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে। তবে, জয়ের কবিতায় এক ধরনের বিদ্রূপ ও পরাবাস্তবতা বেশি, যেখানে এই কবিতাটি আরও ব্যক্তিগত ও আবেগপ্রবণ।

◆ ২. সুবোধ সরকার : সুবোধ সরকারের প্রেমের কবিতাগুলো প্রায়শই সরাসরি, নাগরিক ও আধুনিক। তাঁর কবিতায় যেমন প্রেমিকার প্রতি এক অকৃত্রিম ও প্রায় বিদ্রোহসুলভ অকপটতা দেখা যায়, তেমনই বিদ্যুৎ ভৌমিক এই কবিতায় সেই একই ধরনের সরাসরি প্রকাশভঙ্গী ব্যবহার করেছেন। উভয়ের কবিতাই প্রচলিত কাব্যিক মার্জিত ভাষাকে ত্যাগ করে আরও বাস্তববাদী ও অকপট হয়েছে।

◆ ৩. বিনয় মজুমদার : বিনয় মজুমদারের প্রেমের কবিতাগুলো জটিল, গাণিতিক ও দার্শনিক। তাঁর কবিতায় প্রেমের এক বিমূর্ত রূপ ধরা পড়ে, যেখানে আবেগ ও দর্শন একাকার হয়ে যায়। এই কবিতাটিও ভালোবাসার এক অদৃশ্য ও দার্শনিক রূপকে তুলে ধরে। তবে, বিনয় মজুমদার তাঁর কবিতায় যে জটিল পংক্তিগঠন ও গভীর দার্শনিক প্রশ্ন তুলে ধরতেন, বিদ্যুৎ ভৌমিকের ভাষা তার চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও সাবলীল।

◆ ৪. উৎপলকুমার বসু : উৎপলকুমার বসুর কবিতায় স্মৃতি ও সময়ের এক অদ্ভুত খেলা দেখা যায়। তাঁর কবিতা প্রায়শই এক ধরনের স্বপ্ন-প্রবাহের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। এই কবিতাটিরও কাঠামো অনেকটা সেইরকম, যেখানে স্মৃতিগুলো বিচ্ছিন্নভাবে উঠে আসে। তবে, উৎপলকুমারের ভাষা আরও সূক্ষ্ম ও প্রতীকী, যেখানে বিদ্যুৎ ভৌমিকের ভাষা অনেক বেশি সরাসরি ও স্বতঃস্ফূর্ত।

◆ ৫. শক্তি চট্টোপাধ্যায় : শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় প্রেম ও একাকীত্বের এক তীব্র ও প্রায়শই হিংস্র প্রকাশ দেখা যায়। এই কবিতাটিরও আবেগ সেই তীব্রতার কাছাকাছি, বিশেষত যখন কবি নিজেকে মিথ্যাবাদী হিসেবে বারবার অস্বীকার করেন। তবে, শক্তির কবিতায় এক ধরনের বিদ্রোহী ও ভবঘুরে মানসিকতা ফুটে ওঠে, যা এই কবিতার বিষণ্ণ ও আত্ম-উপলব্ধিমূলক সুর থেকে কিছুটা ভিন্ন।
_________________________________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments