নিজস্ব প্রতিনিধি(সতীশ কুমার): চার বছর পর বড়পর্দায় ফিরেই বাজিমাত কিং খানের। পাঁচদিনে এই ছবি সারা বিশ্বে ৫৫০ কোটির ব্যবসা করেছে। পাঠান মুক্তির পর সোমবারই প্রথম সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন শাহরুখ খান । এদিন বান্দ্রার ‘তাজ ল্যান্ড’স অ্যান্ড’-এর ব্যাঙ্কোয়েট হলে কালো রংয়ের ব্লেজার, টি শার্ট এবং ট্রাউজার্সে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির হন বলিউডের বাদশা। তিনি বলেন, ‘শেষ চারদিনে ওই চার বছরকে ভুলে গিয়েছি।’
প্রশ্নঃ পাঁচ দিনে সাড়ে ৫০০ কোটির ওপর ব্যবসা সারাবিশ্বে। আপনার নতুন ছবির সুনামি আছড়ে পড়েছে সিনেমা প্রেমীদের মনে। এই মূহূর্তটিকে ঠিক কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
শাহরুখঃ প্রথমে আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য। আজকে আমি আপনাদের সামনে আপনাদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছি। আর যাঁরা তাঁদের অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে এই ছবিকে এত বড় সফল করে তুলেছেন, তাঁরা হয়তো এখানে সবাই উপস্থিত নেই। আমি পাঠান টিমের সবার হয়ে আপনাদের ভালোবাসা জানাই। এই ছবির অন্যান্য শিল্পী দীপিকা পাড়ুকোন, জন আব্রাহাম এবং আমি আমরা কেউই এতদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হইনি। কোভিড-১৯ এর মধ্যেও আমরা এই ছবি শুট করেছি, খুব পরিশ্রম করেছি। ওই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা আন্তরিকভাবে, মন দিয়ে আমাদের শুটিং চালিয়ে গিয়েছি। আমরা ঐকান্তিকভাবে ওয়ার্ক মোডের মধ্যে ছিলাম। আজ উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের সব প্রতিনিধিকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ এজন্য যে, পাঠান ছবির রিলিজের মুখে বাধা বিঘ্নের পরিস্থিতি তৈরি হলেও আপনারা এই ছবির সফল রিলিজের জন্য আমাদেরকে সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছেন বলে। এখানে দাঁড়িয়ে আমার গত চারটে বছরের কথা মনে পড়ছে। কোভিডের ভালো-মন্দ দুটো দিকই ছিল। কোভিডের শুরুর দিক থেকে অনেকদিন পর্যন্ত আমি কাজ করিনি। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। ওদের পরিণত হতে দেখেছি। ২০১৮ সালে আমার সর্বশেষ ছবি ব্যর্থ হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছিলেন, এরপর থেকে আমার ছবি আর চলবে না। সেজন্য আমি ইতালিয়ান খাবার বানানোর মধ্যে দিয়ে আমি আমার বিকল্প কেরিয়ারের সন্ধান শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই শেষ চারদিনে আমি আমার ওই চার বছরকে ভুলে গিয়েছি। পাঠান ছবিতে কাজ করা আমার কাছে অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।প্রশ্ন: ‘পাঠান’ ছবির প্রথম পাঁচ দিনের শ্বাসরুদ্ধকর বক্স অফিস উপার্জনের দিকে তাকিয়ে ছবির পরিচালক পাঠানের সিক্যুয়েল তৈরির কথা ইতিমধ্যেই ভেবে নিয়েছেন। আপনি কী বলবেন?
শাহরুখ: আমি এবং আমার পরিবারের কাছে পাঠান ছবির রিলিজের পরের দিন গুলি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সত্যি কথা বলতে বেশ কয়েকবছর আমি এবং আমার পরিবার এমন সুখকর পরিস্থিতি পাইনি। সুতরাং সিদ্ধার্থ আনন্দ যদি আমাকে ‘পাঠান ২’ করার কথা বলেন বা জানান, আমি অবশ্যই করব। আমার জন্য এটা নিশ্চয়ই সম্মানের।
প্রশ্ন: ‘পাঠান’ রিলিজের আগে আপনি এক সংক্ষিপ্ত ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সহশিল্পী জন আব্রাহামের কথা বলেছিলেন?
শাহরুখ: সেদিন বলেছিলাম এখানে আবারও বলছি। জন আমার প্রথম দিককার পুরোনো বন্ধুদের একজন। পাঠান ছবিতে জনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি জনের সঙ্গে কাজ করতে গেলে আমাকেও আমার শরীর তৈরি করতে হবে।
প্রশ্ন: ৩২ বছর হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একজন উল্লেখযোগ্য অভিনেতা হিসেবে কাজ করার পরেও আপনি কী মাঝে মাঝে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন?
শাহরুখ: সাধারণত আমাদের ছবিগুলি রিলিজ হয় শুক্রবারে। কিন্তু এবার ‘পাঠান’-এর বেলায় আমাদের ছবি রিলিজ হয়েছে বুধবারে। শুক্রবারে ছবি রিলিজ গুলির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়। শুক্রবারে রিলিজ হয়ে সেই ছবি যদি রবিবার পর্যন্ত ভালো ব্যবসা না করতে পারে, তাহলে সোমবার থেকেই ছবির অভিনেতা হিসেবে আরও আরও কঠিন পরিশ্রমের জন্য নিজেদের তৈরি হয়ে নিতে হয়। আর যদি সেই ছবি চলে যায়, তা হলেও মনে করে নিতে হবে আমাকে আরও কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু আমি সব সময় সেভাবে ভাবতে পারি না। আমার ছবি একবার ব্যর্থ হলে ভয়ঙ্কর মনের অবস্থা তৈরি হয় আমার। শুধু মনে হতে থাকে একটা ছবির সঙ্গে কতগুলো মানুষ জড়িত রয়েছেন। তখন নিজেকে দোষী মনে হয়। কিন্তু আপনার ছবি হিট হোক বা ফ্লপ হোক, একজন অভিনেতাকে একজন মেহনতি শ্রমিকের মত তার দুদিনের মধ্যেই সেটে ফিরতে হয়। সেটা যদি অভিনেতা হিসেবে আপনি না পারেন তাহলে আপনাকে সিনেমায় করাই ছেড়ে দিতে হবে।
প্রশ্ন: কিছুদিন আগে আপনার ওই ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারেই আপনি বলেছিলেন নিজের অবদমিত অ্যাকশন হিরোর ইমেজের কথা। এতদিন পর্যন্ত আপনার যে স্বপ্ন প্রায় অপূর্ণই থেকে গিয়েছিল। তাই তো?
শাহরুখ: ১৯৯৩ সালে যখন আমরা ‘ডর’ ছবির শুটিং করছিলাম সেই সময় আদিত্য চোপড়া আমাকে একটা অ্যাকশন হিরোর গল্প শুনিয়েছিলেন। আমি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম সেই ন্যারেশন শুনে। কেননা মনে মনে সেই সময়ে সত্যি সত্যিই আমি অ্যাকশন হিরো হতে চাইছিলাম। এমন একজন হিরো যে শুধু গায়ে গেঞ্জি পড়ে থাকেন। সারা শরীরের মাসলস দেখা যায়। ‘ডর’-এর পর আদি আমার কানে শেষমেষ শোনাল-‘তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সনম…।’ আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। বললাম, এর মধ্যে অ্যাকশন কোথায়? আমি ভেবেছিলাম আদি আমার কাছে ছেনি, হাতুড়ি, পাথর নিয়ে আসবেন। চার বছর আগে আদি যখন আমার কাছে অ্যাকশন ফিল্মের ন্যারেশন নিয়ে এলেন, তখন মনে হল এবারও আদি এই ছবি করবেন না। আমি আমার ম্যানেজারকে বললাম এবারও আদি আমাকে মিথ্যে বলছে। কিন্তু ধন্যবাদ জানাই আদিকে যে এবার উনি ওনার কথা রেখেছেন। মুম্বইয়ের সিনেমা হলে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’-র সঙ্গে ‘পাঠান’ একই সঙ্গে চলছে। এটা ভাবতেই ভীষণ ভালো লাগছে।