নিজস্ব প্রতিনিধি(রজত রায়): মুখ্যমন্ত্রী। জনতাকে বলেন, ‘‘যখন এসেছো, এক বার নমস্কার করে তুমি নেমে যাও। কিন্তু এসো।’’ মমতার ডাকে অভিষেক মঞ্চে উঠে দ্রুত উপস্থিত জনগণকে নমস্কার করে নেমে যান। বস্তুত, অভিষেক মঞ্চে ওঠার পরে তাঁর দিকে চেয়ার এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রীই বলেন, ‘‘ও আর বসবে না এখানে। ও বলেছে, শুধু আমি ডেকেছি বলেই এসেছে।’’
সংসদীয় গণতন্ত্র সরকার এবং দলের মধ্যে সুস্পষ্ট সীমারেখা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায়শই সেই নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তবে বাংলায় দীর্ঘ দিন ধরে দল ও সরকারের অবস্থান পৃথক রাখার প্রথা রয়েছে। তৃণমূলের আগে বাম জমানাতেও কখনও সরকারি কর্মসূচিতে দলীয় পদাধিকারীদের দেখা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আলিমুদ্দিনের দলীয় দফতরে বা সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশে গেলেও শৈলেন দাশগুপ্ত, অনিল বিশ্বাস বা বিমান বসুদের কখনও সরকারি কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। সরকারি কর্মসূচির মঞ্চেও তাঁরা যেতেন না।
একই ভাবে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিও দল এবং সরকারের সীমারেখা মেনে চলে। নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের সরকারি কর্মসূচিতে দেখা যায় না দলের সভাপতি জেপি নড্ডাকে। বা তার আগেও বিজেপির কোনও সভাপতিকে সরকারি কর্মসূচির মঞ্চে দেখা যায়নি।
অভিষেক নিজেও এমন ‘সীমারেখা’ মেনে চলার পক্ষপাতী। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সরকারি বিজয়া সম্মিলনী বা বাণিজ্য সম্মেলনের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি সচেতন ভাবেই তা এড়িয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার অভিষেকের সেই অবস্থানই প্রকাশ্যে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুরোধে’ সাড়া দিলেও দ্রুত নমস্কারের পালা সেরে সরকারি মঞ্চ ছেড়েছেন তিনি। বিরোধী নেতাদের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দল এবং সরকারের দূরত্ব রাখার বার্তা দিতেই ‘সচেতন’ ভাবে মমতা-অভিষেকের এই পদক্ষেপ।