নিজস্ব প্রতিনিধি(সতীশ কুমার): হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের ধাক্কায় বেসামাল আদানি গ্রুপ। সেই ধাক্কার জেরে এবার ফলো-অন পাবলিক (এফপিও) তুলে নিল আদানি এন্টারপ্রাইজ। আদানি এন্টারপ্রাইজের তরফে জানানো হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের পুরো টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং আদানি এন্টারপ্রাইজের ‘স্বাস্থ্য’ ভালো আছে। ঘটনাচক্রে এটা হল সেই দিনই, যে দিন দেশের অর্থনীতির বার্ষিক দিক-নির্দেশ কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাব করেছেন নরেন্দ্র মোদীর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছিল, তা আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই যাঁরা এফপিও-তে লগ্নি করেছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথাও জানিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এর ফলে কেন্দ্রীয় বাজেটের দিনেই দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট সামনে আসার পর গত সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছিল। তারা এফপিও ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসবে না। সেই সঙ্গে আমেরিকার শেয়ার গবেষণা সংস্থাটিকে দেওয়া ৪১৩ পাতার জবাবে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘ভারত, দেশের প্রতিষ্ঠান এবং আর্থিক বৃদ্ধির উপরে আক্রমণ’ বলেও তোপ দেগেছিলেন আদানিরা। গত রবিবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি গোষ্ঠীর সিএফও যোগেশিন্দর সিংহ করেন, এফপিও-র ক্ষেত্রে সময়সীমা বা শেয়ারের দাম বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই। তা নির্দিষ্ট সময় অনুসারেই চলবে। পাশাপাশি, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর পাল্টা, গবেষণা সংস্থাটি সব নথি না-পড়েই রিপোর্টটি লিখেছে। এই পরিস্থিতিতে এফপিও-র সময়সীমা নিয়ে নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর পিছু হটা ‘সমস্যা গভীরতর হওয়ার বার্তা’ বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ।বৃহস্পতিবার ‘মোদী-ঘনিষ্ঠ’ শিল্পপতি গৌতম আদানি নিজেই তাঁর সংস্থার এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করলেন। টুইটারে পোস্ট করা ভিডিয়ো বার্তায় আদানি বলেছেন, ‘‘এফপিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে অনেকই অবাক হবেন। কিন্তু এখন বাজারের অস্থিরতা বিবেচনা করে, সংস্থার পরিচালন বোর্ড দৃঢ় ভাবে মনে করেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এফপিও নিয়ে এগিয়ে যাওয়া নৈতিক ভাবে ঠিক হবে না।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের বিনিয়োগকারীদের লোকসানের আঁচ থেকে বাঁচাতেই এফপিও প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত।’’
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি রিপোর্ট পেশ হওয়ার পরে আদানির শেয়ার হুড়মুড়িয়ে পড়েছে। যে সংস্থা আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে আদানি প্রতারণা এবং কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। যদিও সেই অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গ্রুপ। তাতে অবশ্য শেয়ার বাজারে ধস আটকায়নি। শেষ পাঁচটি সেশনে মোট সাত লাখ কোটি টাকা খুইয়েছে আদানি গ্রুপের সাতটি শেয়ার।